রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

শৈশব ও কৈশোরের সেই দিনগুলি বনাম আমার ছেলে

ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে ভোকাট্টা ঘুড়ির পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠ ঘাট পেরিয়ে অজানা এলাকায় হাজির হওয়া বা একদল ছেলে মিলে সময় পেলেই পদ্মার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়া বা উজানে যাওয়া বালিবাহী নৌকা ধরে কিছুদুর গিয়ে আবার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে ফিরে আসা কিংবা শীতের সকালে গাছ থেকে সদ্য পাড়া খেজুরের রস খাওয়ার জন্য গ্লাস হাতে ভাইবোনদের সাথে লাইন দেয়া অথবা ঝড়ের মধ্যে মায়ের বারণ না শুনে আম কুড়োতে দৌড় – যাওয়া বা আসার পথে পাড়ার ছেলেরা মিলে দলবেঁধে বৃষ্টিতে ভেজা কিংবা কখনো কখনো কাদার মধ্যে ফুটবল খেলা যেখানে খেলার চেয়ে গড়াগড়ি খাওয়াটাই বেশী হতো – ছেলেবেলার এই স্মৃতিগুলো এখনও মনের মনিকোঠায় এতই উজ্বল অক্ষরে লেখা যে, যে কোন মুহূর্তে চাইলেই এদের আদ্যোপান্ত জ্বলজ্বল করে ওঠে। মনে হয় এইতো সেদিন বন্ধুদের সাথে বাজিধরে ক্যান্টনমেন্টের গাছের আম চুরি করতে গেছি, এক আর্মি দেখে ফেলায় এক দৌড়ে প্রাচীর পার হয়ে পাশের পুকুরে লাফ দিয়ে পড়েছি (ভাগ্যিশ সেই ব্যাটাও আমার পিছু পিছু প্রাচীর টপকাতে আসেনি) কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারীর ভোরে সবাই মিলে আশে পাশের বাড়ী থেকে (যাদের ফুলগাছ ছিল) ফুল চেয়ে নিয়ে শহীদ মিনারে অর্পণ করে এসেছি – এরকম আরো কত স্মৃতি!!
মনে পড়ে শৈশব বা কৈশোরে স্কুলের গরমের ছুটির দিন গুলোতে বাড়িতে থাকতাম শুধু খাওয়ার সময়ে। মা-বাবারও ছেলেকে নিয়ে অত চিন্তা ছিলনা, সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরলেই চলত। আর একটু বড় হওয়ার পর তো সারাদিন মেতে থাকতাম ফুটবল নয়তো ক্রিকেট খেলা নিয়ে। সন্ধ্যার পরে অবশ্য পড়তে বসতে হতো – তাও রাত ন’টা পর্যন্ত।
স্মৃতির ডানায় ভর করে সেই স্বপ্নময় দিন গুলোয় ফিরে গেলে এই সব সোনালী ছবিগুলোই ভাসে মনের আয়নায়। আমার ছেলেকে (বয়স সাত বছর) যখন আমার ছেলেবেলার গল্প শোনাই, ওর চোখ জ্বলজ্বল করে উঠতে দেখি। ওকে লুকিয়ে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি – কারণ ইচ্ছে করলেও এরকম শৈশব ওকে দিতে পারছি না! দেব কি, সারাদিন তো ওকে বাসাতেই আটকে রাখি। খেলতে দেবো, মাঠ কোথায় এই ইঁট-কাঠ-পাথরে ঢাকা ঢাকা শহরে? যাও বা আছে, নিরাপত্তাহীনতায় ওকে একা পাঠানোর কথা ভাবতেও পারি না। আমি যে নিয়ে যাবো- অফিস থেকে বের হয়ে যানজট পার হয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে বাজে রাত আটটা!! তাই বেচারা মাঠের অভাবে ব্যালকনিতে দৌড়াদৌড়ি করে। কখনো কখনো কোন পার্কে বা খোলা জায়গায় নিয়ে গেলে ওর আর আনন্দের সীমা থাকেনা! আর সেটা দেখে আমার ভেতরের কষ্টটা বাড়ে আরো – ওকে তো প্রতিদিন এই সুযোগটা দিতে পারছি না!
আমার চোখের সামনে আমার ছেলেটা অনেকটা “ফার্মের মুরগীর” মত বড় হচ্ছে। প্রতিদিন দেখি, আর অক্ষম একটা আক্রোশে নিজেই গুমরে মরি – এ রকম একটা শৈশব কি ওর পাওনা ছিল?
-১৯/০৭/২০১২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন